নেভি-জলদস্যু গোলাগুলি, তবুও উদ্ধার করা যায়নি নাবিকদের

Passenger Voice    |    ০২:৫৫ পিএম, ২০২৪-০৩-১৪


নেভি-জলদস্যু গোলাগুলি, তবুও উদ্ধার করা যায়নি নাবিকদের

ভারত মহাসাগরে সোমালিয়া জলদস্যুদের কবলে পড়া ২৩ বাংলাদেশি নাবিককে উদ্ধার করতে নেভির একটি জাহাজ তাদের পিছু নিয়েছে। এসময় জলদস্যু ও নেভির মধ্যে গুলিবিনিময় হয়। সোমালিয়া সময় বুধবার (১৩ মার্চ) রাত থেকে এখন পর্যন্ত নেভির জাহাজটি তাদের অনুসরণ করে যাচ্ছে। কিন্তু জলদস্যুদের অনড় অবস্থানের কারণে জিম্মি থাকা ২৩ বাংলাদেশিকে উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি।

একপর্যায়ে জিম্মি বাংলাদেশিদের হত্যার হুমকিও দেয় জলদস্যুরা। এরপর কোনো উপায় না থাকায় পিছু হটে নেভির জাহাজটি। তবুও ২০ নটিক্যাল মাইল দূর থেকে বাংলাদেশি পতাকাবাহী ‘এমবি আব্দুল্লাহ’কে অনুসরণ করে যাচ্ছে নেভির জাহাজটি। ইতোমধ্যে সোমালিয়া জলদস্যুদের নিয়ন্ত্রিত জলসীমান্তে প্রবেশ করেছে কেএসআরএমের মালিকানাধীন এই জাহাজটি।

বৃহস্পতিবার (১৪ মার্চ) এক বন্দি নাবিকের পাঠানো মেসেজ থেকে এসব তথ্য জানা গেছে। ওই মেসেজটি গণমাধ্যমের হাতে সংরক্ষিত আছে।

তবে জাহাজটি কোন দেশের তা নিশ্চিত হতে পারেননি জিম্মি ওই নাবিক। তবে একাধিক আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে প্রকাশিত খবরে বলা হয়েছে, নেভির ওই জাহাজটি ইউরোপিয়ন ইউনিয়নের (ইইউ)।

এদিকে সোমালিয়ার সময়ে বৃহস্পতিবার (১৪ মার্চ) সকাল ১০টা থেকে ১১টার মধ্যে ২৩ বাংলাদেশিকে আরেক জলদস্যু গ্রুপের কাছে হস্তান্তর করা হতে পারে।

মুক্তিপণ বা অন্য কোন মাধ্যমে নাবিকদের মুক্তি দেওয়া হতে পারে এ বিষয়ে এখন পর্যন্ত জলদস্যুরা যোগাযোগ করেনি ‘এমভি আবদুল্লাহ’র মালিকপক্ষের সঙ্গে। জানায়নি তাদের দাবি-দাওয়া। তবে জাহাজসহ জিম্মি নাবিকদের ফিরিয়ে আনতে তৃতীয়পক্ষ হিসেবে জাহাজটির বিমাকারী যুক্তরাজ্যের একটি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যোগাযোগ শুরু করেছে জাহাজের মালিকপক্ষ। তবে এতে কতদিন সময় লাগতে পারে তা নির্দিষ্ট করে বলতে পারছেন না তারা।

বৃহস্পতিবার (১৪ মার্চ) ভোর ৬টা পর্যন্ত জাহাজটি সোমালিয়ার উপকূল থেকে ৭২ নটিক্যাল মাইল দূরে ছিল। দুপুর নাগাদ জাহাজটি সোমালিয়ায় পৌঁছে যাবে বলে মনে করছেন বাংলাদেশ মার্চেন্ট মেরিন অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমএমওএ) সাধারণ সম্পাদক মো. শাখাওয়াত হোসেন।

কেএসআরএমের মুখপাত্র মিজানুল ইসলাম বলেন, ‘এখন পর্যন্ত জলদস্যুদের পক্ষ থেকে আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেনি। জাহাজের নাবিকেরা ভালো আছেন, সুস্থ আছেন। সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী জলদস্যুরা নাবিকদের কোনো ক্ষতি করেনি। তাদের যাতে কোনো ক্ষতি না হয় আমরা সেই চেষ্টা করছি। জিম্মিদের ফিরিয়ে আনার সর্বাত্মক চেষ্টা চলছে।’

বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে জলদস্যুদের মুক্তিপণ দাবির বিষয়টিকেও তিনি গুজব দাবি করে বলেন, ‘এখন পর্যন্ত আমাদের কাছে কোনো দাবি-দাওয়া জানায়নি জলদস্যুরা। হয়তো জাহাজটিকে তাদের সেফ জোনে নেওয়ার পর তখন তারা তাদের দাবির বিষয়টি বলতে পারে।’

মিজান বলেন, ‘এর আগে ২০১০ সালে আমাদের মালিকের আরো একটি জাহাজ একই জলদস্যু বাহিনীর কবলে পড়েছিল। সেসময় ১০০ দিন পর জাহাজসহ সব নাবিকদের অক্ষত অবস্থায় ফিরিয়ে আনা সম্ভব হয়েছে। আমরা অতীত অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে এবারও সব নাবিকদের সুস্থ শরীরে ফিরিয়ে আনতে পারবো বলে আশা করছি।’

বাংলাদেশ সময় মঙ্গলবার (১২ মার্চ) দুপুরে শিল্পগ্রুপ কেএসআরএমের মালিকানাধীন এসআর শিপিংয়ের জাহাজটি জিম্মি করে সোমালিয়ান দস্যুরা। এরপর বিকেলে জাহাজটি সোমালিয়ার দিকে নিয়ে যাওয়ার খবর পাওয়া যায়।

ওইদিন সন্ধ্যা ৭টার দিকে নাবিকদের সঙ্গে সর্বশেষ যোগাযোগ হয়েছে কেএসআরএম কর্তৃপক্ষের। ২৩ নাবিককে একটি কেবিনে আটকে রাখা হয়েছে। বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে জাহাজের ইন্টারনেট সংযোগও। ছিনিয়ে নেওয়া হয়েছে নাবিকদের কাছে থাকা মোবাইল, সঙ্গে থাকা ডলারও। এখন সেখানে পৌঁছার পর জলদস্যু দলের নেতাদের সিদ্ধান্তের ওপর নির্ভর করছে জাহাজ ও তার নাবিকদের ভাগ্য।

জাহাজটি ৫৮ হাজার মেট্রিক টন কয়লা নিয়ে ৪ মার্চ আফ্রিকার মোজাম্বিকের মাপুটো বন্দর থেকে যাত্রা শুরু করে। ১৯ মার্চ সেটি সংযুক্ত আরব আমিরাতের হামরিয়াহ বন্দরে পৌঁছানোর কথা ছিল। নাবিক ও ক্রুসহ জাহাজটিতে ২৩ জন বাংলাদেশি রয়েছেন। মঙ্গলবার বাংলাদেশ সময় বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে জাহাজটিকে ভারত মহাসাগর থেকে সোমালিয়ার উপকূলে নিয়ে যাওয়ার কাজ শুরু করে জলদস্যুরা। জাহাজটি ওই সময় সোমালিয়া উপকূল থেকে ৪৫০ নটিক্যাল মাইল দূরে অবস্থান করছিল।

কবির গ্রুপের অঙ্গপ্রতিষ্ঠান এসআর শিপিংয়ের মালিকানাধীন ‘এমভি আবদুল্লাহ’ আগে ‘গোল্ডেন হক’ নামে পরিচিত ছিল। ২০১৬ সালে তৈরি বাল্ক কেরিয়ারটির দৈর্ঘ্য ১৮৯ দশমিক ৯৩ মিটার এবং প্রস্থ ৩২ দশমিক ২৬ মিটার। গত বছর জাহাজটি এসআর শিপিং কিনে নেয়। বিভিন্ন ধরনের পণ্য নিয়ে আন্তর্জাতিক রুটে চলাচলকারী এরকম মোট ২৩টি জাহাজ আছে কবির গ্রুপের বহরে।

এর আগে ২০১০ সালের ডিসেম্বরে আরব সাগরে সোমালি জলদস্যুদের কবলে পড়েছিল বাংলাদেশি জাহাজ জাহান মণি। ওই সময় জাহাজের ২৫ নাবিক এবং প্রধান প্রকৌশলীর স্ত্রীকে জিম্মি করা হয়। নানাভাবে চেষ্টার পর ১০০ দিনের চেষ্টায় জলদস্যুদের কবল থেকে মুক্তি পান তারা।

প্যা/ভ/ম